প্রাচীন কাল থেকেই মানব সমাজে ভিক্ষাবৃত্তি চলে আসছে। উপমহাদেশেও এর ইতিহাস দীর্ঘ দিনের। বৃটিশ ও পাকিস্তান আমলের শোষন, বঞ্চনা এবং নদী ভাঙ্গন, দারিদ্র, রোগ-ব্যাধি, অশিক্ষা ইত্যাদি কারণে ভিক্ষাবৃত্তির ব্যাপক বিস্তৃতি ঘটে। বর্তমান সময়ে কিছু মানুষের কর্ম বিমুখতা এবং একদল স্বার্থন্বেষী মহলের অর্থ উপার্জনের হাতিয়ার হিসেবে ভিক্ষাবৃত্তির ব্যপক প্রসার ঘটেছে। ভিক্ষাবৃত্তি একটি সামাজিক ব্যাধি। এটি স্বীকৃত কোন পেশা নয়। বর্তমানে বাংলাদেশের সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়ন ঘটেছে। স্বল্পোন্নত দেশের অবস্থান থেকে উন্নয়নশীল দেশের তালিকায় উত্তরণ ঘটেছে। ভিক্ষাবৃত্তির লজ্জা থেকে দেশকে মুক্ত করার সময় এসেছে।
দেশে দারিদ্র নিরসনে সরকারের অঙ্গীকার বাস্তবায়ন এবং ভিক্ষাবৃত্তির মত অমর্যাদাকর পেশা থেকে মানুষকে নিবৃত করার লক্ষ্যে ভিক্ষাবৃত্তিতে নিয়োজিত জনগোষ্ঠীর পুনর্বাসন ও বিকল্প কর্মসংস্থানের জন্য সরকারের রাজস্ব খাতের অর্থায়নে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় ‘‘ভিক্ষাবৃত্তিতে নিয়োজিত জনগোষ্ঠীর পুনর্বাসন ও বিকল্প কর্মসংস্থান’’ শীর্ষক কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। আগস্ট/২০১০ খ্রিঃ হতে কর্মসূচি’র কার্যক্রম শুরু হয়। ২০১০ সাল হতে ভিক্ষুক পুনর্বাসন কার্যক্রম শুরু হলেও তা তেমন ব্যাপকতা পায়নি। বর্তমান জনবান্ধব সরকার ভিক্ষাবৃত্তির মত সামাজিক ব্যধিকে চিরতরে নির্মূলের বিষয়ে অত্যন্ত আন্তরিক। বিষয়টি বিবেচনায় এনেই ২০১৭-২০১৮ অর্থ বছরে প্রথম বারের মত দেশের ৫৮টি জেলায় ভিক্ষুক পুনর্বাসনও বিকল্প কর্মসংস্থানের নিমিত্তে অর্থ প্রেরণ করা হয়।
২০১৭-১৮ অর্থবছরে দেশের ৫৮টি জেলা হতে জেলা প্রশাসক ও উপপরিচালক, জেলা সমাজসেবা কার্যালয় এর যৌথ স্বাক্ষরিত চাহিদা পত্রে ২০৩৫২৮ জন ভিক্ষুককে পুনর্বাসনের জন্য ৪২২ কোটি ২২ লক্ষ টাকা বরাদ্দ চাওয়া হয়। ২০১৮-১৯ অর্থ বছরে বাজেটে ৩ কোটি টাকা বরাদ্দ পাওয়া যায়। ৩৮টি জেলায় উক্ত অর্থ ভিক্ষুক পুনর্বাসনের নিমিত্তে জেলা প্রশাসক ও উপপরিচালক এর যৌথ স্বাক্ষরে পরিচালিত ব্যাংক হিসেবে প্রেরণ করা হয়।
ঢাকা শহরের ভিক্ষুক মুক্ত এলাকা: ঢাকা শহরে ভিক্ষাবৃত্তি রোধের জন্য প্রথমিকভাবে সরকার শহরের কিছু এলাকা ভিক্ষুকমুক্ত ঘোষণা করেছেন। এলাকাগুলো হচ্ছে- বিমানবন্দরে প্রবেশ পথের পূর্ব পাশের চৌরাস্তা, বিমান বন্দর পুলিশ ফাড়িঁ ও এর আশ-পাশ এলাকা, হোটেল রেডিসান সংলগ্ন এলাকা, ভিআইপি রোড, বেইলী রোড, হোটেল সোনারগাঁও ও হোটেল রূপসী বাংলা সংলগ্ন এলাকা ও কুটনৈতিক জোন সমূহ। ঢাকা শহরের ভিক্ষুকমুক্ত ঘোষিত এলাকাসমূহ ভিক্ষুকমুক্ত রাখার লক্ষ্যে নিয়মিত মাইকিং, বিজ্ঞাপন, লিফলেট বিতরণ এবং বিভিন্ন স্থানে নষ্ট হয়ে যাওয়া প্লাগস্ট্যান্ড মেরামত/নতুন স্থাপন করার কাজ চলমান রয়েছে। ২০২০-২১ অর্থ বছরে ঢাকা শহরের ভিক্ষুকমুক্ত ঘোষিত এলাকাসমূহে ১৮ টি মোবাইল কোর্ট পরিচালনার মাধ্যমে ১৮০ জন পেশাদার ভিক্ষুককে আটক করা হয় যাদের মধ্যে ৭২ জনকে সরকারী আশ্রয় কেন্দ্রে বিভিন্ন মেয়াদে আটক রেখে প্রশিক্ষন প্রদান ও পুনর্বাসন করা হয়। অবশিষ্ট ১০৮ জনকে পরিবারে পুনর্বাসন করা হয়। ভিক্ষুক পুনর্বাসনের কাজটি পদ্ধতিগত ভাবে করার জন্য একটি নীতিমালা প্রণয়ন করা হয়েছে।
Planning and Implementation: Cabinet Division, A2I, BCC, DoICT and BASIS