Wellcome to National Portal
Main Comtent Skiped

Probation

প্রবেশন এন্ড আফটার কেয়ার সার্ভিস

পটভূমি

সাধারণত অপরাধ বলতে আইন দ্বারা নিষিদ্ধ ও দন্ডনীয় কাজকে বোঝায়। অর্থাৎ রাষ্ট্র কর্তৃক প্রণীত ও বলবৎকৃত আইনের পরিপন্থী এবং দন্ডনীয় যে কোন কাজই অপরাধ। এটি একটি সামাজিক ব্যাধি। কখনও মন্দ পরিবেশ-পরিস্থিতি ও অসৎ সঙ্গের প্রভাবে, কখনও অজ্ঞানতার বশবর্তী হয়ে, আবার কখনও সজ্ঞানে অপরাধের সাথে মানুষ জড়িয়ে পড়ে। প্রতিটি সভ্য দেশের ন্যায় আমাদের দেশেও অপরাধীদের বিচার ও শাস্তি প্রদানের বিধান রয়েছে। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায়, শাস্তি অপরাধ প্রতিরোধে সহায়ক না হয়ে অপরাধ বিস্তারে সহায়ক হয়।  অপরাধের দায়ে কোন অপরাধীকে যখন কোন কারাগারে প্রেরণ করা হয়, কারাগারে থাকাকালীন সময়ে সে অন্যান্য দাগী অপরাধীদের সংস্পর্শে এসে  মারাত্মক ধরনের অপরাধের অভিজ্ঞতা ও ক্ষতিকর কুশিক্ষা  লাভ করে থাকে। অপরাধ বিশেষজ্ঞ ও আধুনিক চিন্তাবিদগণ অপরাধ সংশোধনের ক্ষেত্রে একজন অপরাধীর শাস্তিদান ব্যবস্থার পরিবর্তে সংশোধনমূলক সংশোধন অর্থাৎ শাস্তির পরিবর্তে প্রাথমিক ব্যবস্থা হিসেবে তার নিজ পরিবেশে অর্থাৎ সমাজে রেখেই সংশোধন ও পুনবার্সনমূলক ব্যবস্থা উদ্ভাবন করেছেন। ১৯৬০ সালে “দ্য প্রবেশন অব অফেন্ডার্স অর্ডিন্যান্স” জারীর মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে এ কার্যক্রম শুরু হয়।

সমাজসেবা অধিদফতর কর্তৃক পরিচালিত গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্যে ‘প্রবেশন এন্ড আফটার কেয়ার কার্যক্রম’ অন্যতম। ১৯৬০ সালে ‘প্রবেশন অফ অফেন্ডার্স অর্ডিন্যান্স’ জারী এবং ১৯৬২ সালে ২য় পাঁচশালা পরিকল্পনাধীন সংশোধনমূলক এ কার্যক্রম চালু হয় এবং ২টি উন্নয়নমূলক প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়। যথা- (১) প্রবেশন অব অফেন্ডার্স প্রকল্প এবং (২) আফটার কেয়ার সার্ভিসেস। বর্তমানে ৬টি সিএমএমকোর্টসহ ৬৪টি জেলায় সর্বমোট ৭০টি ইউনিটে এ কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। এ কার্যক্রমের আওতায় প্রবেশন অফ অফেন্ডার্স অর্ডিন্যান্স, ১৯৬০ (সংশোধিত ১৯৬৪) ছাড়াও বর্তমানে শিশু আইন, ২০১৩ এবং কারাগারে আটক সাজাপ্রাপ্ত নারীদের বিশেষ সুবিধা আইন, ২০০৬ ও সংশ্লিষ্ট বিধিমালা বাস্তবায়িত হচ্ছে। জেলাপর্যায়ে ৭০ জন প্রবেশন অফিসার ছাড়াও সকল উপজেলা সমাজসেবা অফিসার এবং বিভাগীয় জেলার শহর সমাজসেবা অফিসারগণ প্রবেশন অফিসারের অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করছেন।

প্রবেশন 

কোন অপরাধের দায়ে দোষী সাব্যস্ত কোন ব্যক্তি এবং আইনের সাথে সংঘর্ষে আসা কোন শিশুকে কারাগারে না রেখে বিজ্ঞ আদালতের আদেশে শর্ত সাপেক্ষে প্রবেশন অফিসারের তত্ত্বাবধানে তার পরিবার ও সামাজিক পরিবেশে রেখে কৃত অপরাধের সংশোধন ও তাকে সামাজিকভাবে একীভূতকরণের সুযোগ দেয়ার প্রক্রিয়া হচ্ছে ‘প্রবেশন’। এটি একটি অপ্রাতিষ্ঠানিক ও সামাজিক সংশোধনীমূলক কার্যক্রম। এটি অপরাধীর বিশৃঙ্খল ও বেআইনি আচরণ সংশোধনের জন্য একটি সুনিয়ন্ত্রিত কর্মপদ্ধতি। এখানে অপরাধীকে পুনঃঅপরাধ রোধ ও একজন আইন মান্যকারী নাগরিক হিসেবে গড়ে উঠার জন্য সহায়তা করা হয়।

‘প্রবেশন আদেশ’ বলতে প্রবেশন অব অফেন্ডার্স অর্ডিনেন্স, ১৯৬০ এর ধারা ৫ অথবা শিশু আইন, ২০১৩ এর ধারা ৩৪ উপধারা (৬) এর অধীন কোনো ‘প্রবেশন আদেশ’কে বোঝাবে। বিজ্ঞ আদালত অপরাধের প্রকৃতি, অপরাধীর চরিত্র, ঘটনার পারিপার্শ্বিকতা এবং অপরাধ সংঘটনে তার সংশ্লিষ্টতা বিবেচনা করে প্রবেশন আদেশ প্রদান করে থাকেন।

 

 

 

প্রবেশনের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য 

 

  • প্রবেশনারকে আত্মসুদ্ধি করতে সুযোগ দেওয়া ও সাহায্য করা ;
  • সামাজিক ও মনস্তাত্বিক চিকিৎসার মাধ্যমে অর্থাৎ অপরাধের মূল কারণসমূহ নির্ণয়পূর্বক প্রবেশনারের সংশোধনের ব্যবস্থা করা;
  • চারিত্রিক সংশোধনের মাধ্যমে পুনঃঅপরাধ রোধ করতে সহায়তা করা;
  • প্রবেশনারকে শৃঙ্খল জীবনযাপনে সহায়তা করা;
  • একজন আইনমান্যকারী নাগরিক হিসেবে গড়ে উঠতে সহায়তা করা;
  • প্রবেশনারের পিতা-মাতা এবং অন্যান্য আত্মীয়-স্বজন ও পাড়া প্রতিবেশীদের মন হতে বিরুপ মনোভাব দূর করে প্রবেশনারের প্রতি সমানুভূতিশীল করে তোলা;
  • সমাজে উৎপাদনশীল ও দায়িত্বশীল নাগরিক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হবার সুযোগ দান করা;
  • মোটিভেশন, কাউন্সেলিং এর মাধ্যমে অপরাধ সম্পর্কে প্রবেশনারকে সচেতন করে তাকে অপরাধ হতে দূরে রাখা;
  • সামান্যতম ভুলের জন্য অপরাধীকে ‘দাগী আসামী’ হিসেবে চিহ্নিত হওয়ার হাত হতে রক্ষা করা;
  • সংশোধনের পর প্রবেশনারকে সমাজে পুনঃএকীকরণ;
  • সমাজে অপরাধের সংখ্যা উত্তরোত্তর কমিয়ে আনা;

 

কিভাবে প্রবেশনের সুযোগ পাওয়া যায়?

প্রবেশন মঞ্জুর করা মূলতঃ বিজ্ঞ আদালতের একটি স্বেচ্ছাধীন ক্ষমতা। নিম্নলিখিত পদ্ধতিতে একজন অপরাধীর প্রবেশন মঞ্জুর করা হয়:

  • বিজ্ঞ আদালতে বিচার কার্যের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন বা আইনের দৃষ্টিতে দোষী সাব্যস্থ হওয়া বা দোষ স্বীকার করার পর বিজ্ঞ আদালতের কাছে প্রবেশনের সুযোগ পাওয়ার জন্য গোচরীভূত করা যায়।
  • আদালত যদি উপযুক্ত মনে করেন যে, আইনের অধীনে প্রবেশন আদেশের শর্তাবলী পালনে অঙ্গীকারাবদ্ধ করে অপরাধী তার সংশোধন ও পুনর্বাসনে উপকৃত হতে পারে, তখন আদালতে নিয়োজিত প্রবেশন অফিসারকে অপরাধীর বয়স, চরিত্র, বংশ পরিচয়, পারিবারিক পারিপার্শ্বিক তথ্যাদি বা অবস্থাদি তদন্ত করে একটি প্রাক দন্ডাদেশ প্রতিবেদন আদালতের নিকট দাখিল করার অনুরোধ করেন।
  • তদন্তে প্রবেশন অফিসার যদি বুঝতে পারেন যে, অপরাধীর প্রবেশনের বা সমাজভিত্তিক সংশোধনের সুযোগ রয়েছে তা হলে তিনি প্রবেশনের সুপারিশ করেন।
  • উক্ত প্রতিবেদন পাওয়ার পর তা পর্যালোচনা করে যদি বিজ্ঞ আদালতের কাছে প্রতীয়মান হয় যে, অপরাধীকে যদি প্রবেশন বা সমাজভিত্তিক সংশোধনের সুযোগ দেয়া হয়, তাহলে অপরাধী স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে পারে সেক্ষেত্রে আদালত প্রবেশন মঞ্জুর করতে পারেন;
  • বিজ্ঞ আদালত মামলার কাগজপত্র ও সার্বিক অবস্থা পর্যালোচনা করে  স্ব-উদ্যোগেও প্রবেশন মঞ্জুর করতে পারেন।

 

আফটার কেয়ার সার্ভিস

কারাগার থেকে মুক্ত ব্যক্তি, প্রবেশনে মুক্তি ও অব্যাহতিপ্রাপ্ত ব্যক্তি এবং কারাগারে আটক সাজাপ্রাপ্ত নারীদের সমাজে পুনঃএকীকরণের লক্ষ্যে ‘অপরাধী সংশোধন ও পুনর্বাসন সমিতি’র মাধ্যমে আফটার কেয়ার কার্যক্রম পরিচালিত হয়।

 

আফটার কেয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে প্রদেয় সেবা

 

  • কারাগার অভ্যন্তরে কয়েদীদের জন্য বয়স্ক শিক্ষা ও ধর্মীয় শিক্ষার ব্যবস্থা করা;
  • খেলাধুলা ও বিনোদনমূলক কর্মসূচি গ্রহণ করা;
  • কারাগার অভ্যন্তরে কয়েদীদের জন্য কুটির শিল্পসহ বিভিন্ন ধরনের যুগোপযোগী প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা;
  • কাউন্সেলিং ও মোটিভেশনাল বৈঠক আয়োজন করা;
  • কারাগার থেকে মুক্তিপ্রাপ্ত ব্যক্তিকে সামাজিক ও অর্থনৈতিক পুনর্বাসনে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা প্রদান করা;
  • প্রয়োজনবোধে বিভিন্ন প্রকার কাজে নিয়োজিত করে পুনর্বাসনের ব্যবস্থা ;
  • কয়েদীদের আত্মীয়-স্বজনদের সাথে সংযোগ স্থাপন করে সমাজে প্রতিষ্ঠিত করার ব্যবস্থা করা;
  • প্রয়োজনবোধে কারাগার থেকে মুক্তিপ্রাপ্ত ব্যক্তিকে এককালীন আর্থিক ঋণ দিয়ে তাদের স্থায়ী আয়ের পথ প্রশস্ত করে দেয়া ;
  • কারাগার থেকে মুক্তিপ্রাপ্ত ব্যক্তিকে প্রযোজ্য ক্ষেত্রে সমাজসেবা অধিদফতরের বয়স্ক ভাতা, বিধবা ও স্বামী নিগৃহীতা ভাতা, প্রতিবন্ধী ভাতা ইত্যাদি সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় আনা;
  • অপরাধীদের কল্যাণ সাধনের জন্য বিভিন্ন বিভাগ বা অফিসের মধ্যে সংযোগ সাধন ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা;
  • আর্থিক অস্বচ্ছলতার  দরুন  যে সকল অপরাধী আদালতে জামিন লাভ বা আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ হতে বঞ্চিত হচ্ছে প্রয়োজনবোধে তাদেরকে আর্থিক সাহায্য প্রদান করা;

 

আফটার কেয়ার সার্ভিসের উদ্দেশ্য

  • কারাগার অভ্যন্তরে বয়স্ক শিক্ষা ও ধর্মীয় শিক্ষার মাধ্যমে অপরাধের কুফল সম্পর্কে সচেতন ও অপরাধবিমুখ করা;
  • খেলাধুলা ও বিনোদনমূলক কর্মসূচির মাধ্যমে শারীরিক ও মানসিক উৎকর্ষ সাধন করা;
  • কাউন্সেলিং ও মোটিভেশনের মাধ্যমে অপরাধের পুনরাবৃত্তি রোধ করা;
  • প্রশিক্ষণ কর্মসূচির মাধ্যমে আত্মনির্ভরশীল ও উপার্জনক্ষম করে গড়ে তোলা;
  • এককালীন আর্থিক ঋণ কিংবা সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির মাধ্যমে সামাজিক ও অর্থনৈতিকভাবে পুনর্বাসন;
  • সমাজে পুনঃএকীকরণ।